মঙ্গলবার, ১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘পুলিশ-সেনা মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা হচ্ছে’

ডেস্কনিউজঃ অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ‘অপপ্রচার’ চালিয়ে সেনা-পুলিশ মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করেছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।

পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনাটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠনটি বলেছে, অপকর্মের জন্য দায়ী ব্যক্তির শাস্তি হবে, ব্যক্তির কোনো অপকর্মের দায় পুলিশ নেবে না। পুলিশ অপরাধীকে কঠোর শাস্তি প্রদানে সবসময় সর্বাত্মক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কক্সবাজারের টেকনাফে গত ৩১ জুলাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা। এতে দেশবাসীর মতো বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্যও অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত।

এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইনি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মামলা রুজু হয়েছে এবং তা তদন্তাধীন রয়েছে।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর প্রধান ও পুলিশ প্রধান যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে, তার জন্য ব্যক্তিই দায়ী থাকবেন; প্রতিষ্ঠান দায় নেবে না।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এই বক্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে সাধুবাদ জানাচ্ছে। এ ঘটনার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সর্বাত্মক আইনি ও প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রদানে তাদের যৌথ উদ্যোগ অ্যাসোসিয়েশনকে গভীরভাবে আশান্বিত করেছে।

বাংলাদেশ পুলিশ এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অ্যাসোসিয়েশন বিশ্বাস করে, অতীতের মতো পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যকার বিদ্যমান আস্থা-বিশ্বাস এবং আন্তরিক ও শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ভবিষ্যতে তা আরও দৃঢ় ও সংহত হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অ্যাসোসিয়েশন গভীর বিস্ময় ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, এ ঘটনাকে উপজীব্য করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানামুখী অপপ্রচার চালিয়ে আইনি কার্যক্রমকে প্রভাবিত ও বাধাগ্রস্ত করতে তৎপর রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি পেশাদার বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর এ অপচেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত।

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অশুভ চক্রের এ ধরনের ঢালাও নেতিবাচক প্রচারণা সত্ত্বেও দুই বাহিনীর সদস্যরা মনোবল অটুট রেখে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, পুলিশ একটি রাষ্ট্রের দৃশ্যমান অবয়ব হিসেবে বিবেচিত। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাই দিনশেষে জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। আমরা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলতে চাই, পুলিশের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল থেকে সংবিধান ও মানবাধিকার সমুন্নত রেখে দেশ ও মানুষের কল্যাণে সর্বদা কাজ করে যাবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন সম্পন্নকরণ, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন মেগা ইভেন্টে নিরাপত্তা দেওয়াসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুঃসময় ও যে কোনো ক্রান্তিকালে পুলিশ ও সেনাবাহিনী দেশপ্রেম-নিষ্ঠার সঙ্গে পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির আবহে একযোগে কাজের মাধ্যমে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে।

জাতিসংঘ মিশনেও পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত চলমান করোনাযুদ্ধের সম্মুখ সারির যোদ্ধা পুলিশ নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক প্রত্যয়ে উজ্জীবিত হয়ে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছে।

এ লড়াইয়ে ইতোমধ্যে পুলিশের ৬৬ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজারের বেশি। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন এবং অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ধংসাত্মক কার্যকলাপ প্রতিরোধেও পুলিশের অনেক অকুতোভয় সদস্য আত্মোৎসর্গ করেছেন।

এই বিভাগের আরো খবর